নেত্রকোনার কলমাকান্দায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শহীদ বীর সাত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে "ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধ দিবস " যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে।
আজ ২৬ জুলাই বুধবার জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে এ দিবসটি পালন করা হয়।
দিনব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে নাজিরপুর স্মৃতিসৌধে ও পরে লেংঙ্গুরার সীমান্তবর্তী ফুলবাড়ি এলাকায় সাত শহীদের সমাধিতে গার্ড অফ অনার প্রদান ও পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয় । পরে ওইদিন বিকালে লেংঙ্গুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এক আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয় ।
এসময় নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী খান খসরু।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নেত্রকোনা - ১ আসনের সংসদ সদস্য মানু মজুমদার, ৩১১ সংরক্ষিত মহিলা আসনের নেত্রকোনা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান শেফালী, নেত্রকোনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অসিত কুমার সরকার সজল, পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ, নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আমিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামছুর রহমান লিটন, প্রাক্তন জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন, কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালেক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইসলাম উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান লাল মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার প্রমূখ। এবারও বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাসহ স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা, জনপ্রতিনিধি , রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ নানান শ্রেণী পেশার লোকজন এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই সকালে দূর্গাপুরের বিরিশিরি থেকে কলমাকান্দায় পাকহানাদার ক্যাম্পে রসদ আসার খবর পান মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী কমান্ডার নাজমুল হক তারার নেতৃত্বে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে নাজিরপুর বাজারের সকল প্রবেশ পথে এম্বুস করেন।
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর পাকহানাদার বাহিনী না আসায় তাদের এম্বুস প্রত্যাহার করে তারা নিজ ক্যাম্পের পথে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে নাজিরপুর কাচারির কাছে পাকহানাদার বাহিনী তাদের উপর অতর্কিতে গুলি বর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এই সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ওই সাত মুক্তিযোদ্ধা।
শহীদ যারা হলেন- নেত্রকোনার ডা. আবদুল আজিজ, মো. ফজলুল হক ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মো. ইয়ার মাহমুদ, ভবতোষ চন্দ্র দাস, মো. নূরুজ্জামান, দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস ও জামালপুরের মো. জামাল উদ্দিন। সম্মুখ যুদ্ধ শেষে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের লেংগুরার ফুলবাড়ী সীমান্তে গনেশ্বরী নদীর পাড়ে ১১৭২নং পিলার সংলগ্ন স্থানে সমাহিত করা হয় । মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা সেই স্মৃতি ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে প্রতিবছর জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে। মহান ওই সাত আত্মত্যাগী শহীদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
আরও পড়ুন: নেত্রকোণার বারহাট্টায় সর্বস্তরের জনগনকে নিয়ে পুলিশের সুধী সমাবেশ
শেখ শামীম/কলমাকান্দা